সোমবার, মে 20, 2024

দেশের প্রথম নারী বনরক্ষী দিলরুবা মিলি

Must read

- Advertisement -
  • বনে ঘুরে ঘুরেই কেটে যায় তার সময়
  • ব্যাচে ২০৩ জনের মধ্যে একমাত্র তিনিই ছিলেন নারী
দেশের প্রথম নারী বনরক্ষী দিলরুবা মিলি | “নদী ভাঙন ও ঝড়বৃষ্টি থেকে বাঁচায় গাছ। তাই গাছপালার প্রতি বরিশালের মানুষের আলাদা টান আছে। পরিবেশ-প্রকৃতি আমাদের খুবই আপন। সেই জায়গা থেকে চিন্তা ছিল এমন কিছু করা যায় কি-না। এই ভাবনা থেকেই বনরক্ষী পদে আবেদন করি। সুযোগও পেয়ে যাই। চাকরিতে ঢোকার পর জানতে পারি এই পদে আমিই প্রথম নারী,” বলছিলেন দিলরুবা মিলি। 

“নদী ভাঙন ও ঝড়বৃষ্টি থেকে বাঁচায় গাছ। তাই গাছপালার প্রতি বরিশালের মানুষের আলাদা টান আছে। পরিবেশ-প্রকৃতি আমাদের খুবই আপন। সেই জায়গা থেকে চিন্তা ছিল এমন কিছু করা যায় কি-না। এই ভাবনা থেকেই বনরক্ষী পদে আবেদন করি। সুযোগও পেয়ে যাই। চাকরিতে ঢোকার পর জানতে পারি এই পদে আমিই প্রথম নারী,” বলছিলেন দিলরুবা মিলি। 

মিরপুরের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে কর্মরত মিলি দেশের প্রথম নারী বনরক্ষী। ২০১৬ সালে তিনি বন বিভাগে যোগ দেন।

মিলি জানান, রাজশাহীতে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে বিরল অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না তাকে।

“প্রথমবার গেট দিয়ে ঢোকার সময় নিরাপত্তারক্ষীরা বললেন, ‘মেয়েরা এ চাকরি করে না। আপনি যান।’ কাগজ দেখানোর পর তারা অবাক হন ও সহযোগিতা করেন।”

২০৩ জনের নিয়োগ, একমাত্র নারী মিলি

স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষ। বাড়িতেই কিছু একটা করার কথা ভাবছিলেন মিলি। ২০১৬ সালের দিকে এমন সময়ই তার চোখে পড়ে বনরক্ষীর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। আবেদন করেন। তখনও ধারণা ছিল না কেমন অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করছে সামনে।

মিলি বলেন, “বনরক্ষী পদে পরীক্ষা ও ভাইবা শেষ করে রাজশাহীর পুলিশ একাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ নিই।“পরীক্ষা ও প্রশিক্ষণে বেশকিছু প্রতিবন্ধকতার মোকাবিলা করতে হয়েছে। কারণ এ পেশায় আগে কোনো নারী ছিলেন না। নারী হিসেবে আমি একাই প্রশিক্ষণ নিই। ফলে প্রতিকূল অবস্থা পাড়ি দিয়েই কাজ করতে হয়েছে।”

মিলি আরও বলেন, “সেবার ২০৩ জন বনরক্ষী নিয়োগ করা হয়। একমাত্র নারী হিসেবে আমি নিয়োগ পাই। পুরো প্রক্রিয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন।”

প্রশিক্ষণ শেষে ২০১৬ সালে ঢাকায় বনরক্ষী হিসেবে যোগ দেন মিলি। এরপর থেকে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে বনরক্ষী হিসেবে কাজ করছেন।

দিন কেটে যায় বনে ঘুরে

বনরক্ষী হিসেবে দিনভর পুরো উদ্যানে ঘুরে ঘুরে কাটাতে হয় মিলিকে। শুরুর দিকে কিছুটা বেগ পেতে হলেও এখন উপভোগ করেন বিষয়টি।

তিনি বলেন, “সকালে বনে গিয়ে দাপ্তরিক কাজকর্ম সেরে ফেলি। তারপর ঘোরাঘুরি শুরু। দায়িত্ব পেয়ে বনের নিরাপত্তা ফেরানো ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। বনরক্ষীরা ছিনতাই ও হয়রানিমুক্ত বন উপহার দিতে পেরেছেন।”

বনের ভেতর পাখির কিচিরমিচির, মানুষের ভিড়। কখনও ভীষণ কোলাহল, কখনও নিস্তব্ধতা। এসবে এখন মিলি অভ্যস্ত। একদিন না হাটতে পারলেই বরং তার হাঁসফাঁস লাগে। বন এখন তার আরেক বাড়ি। 
বলেন, “এই পেশা আমার কাছে ভীষণ উপভোগ্যও।”

উদ্ভিদ উদ্যানে জনপ্রিয় মিলি

নারী বনরক্ষী হিসেবে চ্যালেঞ্জ ছিল কর্মক্ষেত্রে মানিয়ে নেওয়া। সেখানেও ভীষণ জনপ্রিয় মিলি। 

বনে ঘুরতে ঘুরতে দেখা যায়, অন্য বনরক্ষী, বাগান মালিসহ সবার সঙ্গে ভীষণ আন্তরিক সম্পর্ক তার। বিভিন্ন পয়েন্টে দায়িত্বরত কর্মচারী বা অন্যান্য বিভাগের কর্মচারীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতেই পার হয় অনেকটা সময়। 

মিলির নেতৃত্বে তার সঙ্গে বনরক্ষীর কাজ করছেন আমিনুল্লাহ খন্দকার। 
তিনি বলেন, “মিলি আমাদের একমাত্র নারী বনরক্ষী। তিনি অত্যন্ত সাহসী। বনের নিরাপত্তায় যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন সাহস করে। আমাদের সঙ্গেও চমৎকার আচরণ। তার আচরণের কারণেও আমরা অনেকেই একসাথে কাজ করে আনন্দ পাই।” 

একই কথা জানালেন সহকর্মী এখলাসুর রহমান, মামুনুর রশীদসহ আরও অনেকেই।

মিলির মতে, “বনরক্ষীর কাজে বহু চ্যালেঞ্জ। তবে নারীরা এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম। চ্যালেঞ্জিং নারীদের জন্য এটি উত্তম পেশা হতে পারে বলেও মনে করেন দেশের প্রথম নারী বনরক্ষী।”

- Advertisement -
- Advertisement -

More articles

- Advertisement -

Latest article