সোমবার, মে 20, 2024

নজরুলের ঈদুল ফিতরের সেই কালজয়ী গানটি যেভাবে রচিত হয়

Must read

- Advertisement -

‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানি তাগিদ।’

বাঙালি মুসলিমদের ঈদ উৎসবের একটি অপরিহার্য অংশ হলো এই কালজয়ী গানটি। ঈদের চাঁদ দেখা যাওয়ার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে টেলিভিশনে, রেডিওতে বাজতে শুরু করে এই গানটি। এ গান ছাড়া রমজানের ঈদ আমাদের অসম্পূর্ণ থেকে যায়। 

নজরুলের ঈদুল ফিতরের সেই কালজয়ী গানটি যেভাবে রচিত হয় | 'ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদতুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানি তাগিদ।'

জনপ্রিয় শিল্পী আব্বাসউদ্দিন আহমদের অনুরোধে এটি রচনা করেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯৩১ সালের ২৫ মে, এই গানটি প্রথমবার রেকর্ড করা হয়। গানটির সুরকারও ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম নিজেই।

এই গানটি রচনার পেছনে একটি গল্প আছে। আব্বাসউদ্দীন আহমদ ছিলেন একজন বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী। তিনি নজরুলের শিষ্যও ছিলেন। 
একদিন আব্বাসউদ্দীন নজরুলকে বলেন, আপনি তো অনেক সুন্দর গান লিখেন। কিন্তু বাংলা ভাষায় ইসলামী গান খুব কম। আপনি যদি বাংলায় ইসলামী গান লিখেন, তাহলে মুসলিমদের ঘরে ঘরে আপনার জয়গান বাজবে।

নজরুল আব্বাসউদ্দীনের কথা শুনে খুবই খুশি হলেন। তিনি আব্বাসউদ্দীনকে বললেন, আমি তোমার আবদার রাখব। আমি ঈদুল ফিতরের জন্য একটি গান লিখব।

আব্বাসউদ্দীন নজরুলের কথা শুনে খুবই আনন্দিত হলেন। তিনি নজরুলের কাছ থেকে গানটি লিখতে অনুরোধ করলেন।

নজরুল গানটি লিখতে শুরু করলেন। তিনি গানটিতে ঈদুল ফিতরের আনন্দ ও খুশির কথা তুলে ধরলেন। তিনি গানটিতে ইসলামের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথাও উল্লেখ করলেন।

কিছুদিনের মধ্যেই নজরুল গানটি লিখে শেষ করলেন। তিনি আব্বাসউদ্দীনকে গানটি শুনালেন। আব্বাসউদ্দীন গানটি শুনে খুবই মুগ্ধ হলেন। তিনি গানটি রেকর্ড করার জন্য প্রস্তুত হলেন।

১৯৩১ সালের ২৫ মে, এই গানটি প্রথমবার রেকর্ড করা হয়। গানটি রেকর্ড করে হিজ মাস্টার্স কোম্পানি। গানটি রেকর্ড হওয়ার পর, মুহূর্তের মধ্যেই সারা বাংলায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। গানটি বাঙালি মুসলিমদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়।

গান রেকর্ড করার পর তখন দুই মাস বাকি ছিল ঈদুল ফিতরের। ঠিক হলো ঈদে এই রেকর্ড বাজারে আসবে।

ঈদের ছুটিতে কোচবিহারের বাড়িতে গেলেন আব্বাসউদ্দীন। একদিন কলকাতা ফিরে এসে ট্রামে চড়ে অফিসে যাচ্ছেন। তার পাশে বসে এক যুবক গুনগুন করে গাইছে, ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে’। আব্বাসউদ্দীন একটু অবাক হলেন। ও এই গান শুনল কী করে! 

অফিস ছুটির পর গড়ের মাঠে বেড়াতে গেলেন আব্বাস। মাঠে একদল ছেলের মাঝে একটি ছেলে গেয়ে উঠল, ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে’। তখন আব্বাসউদ্দীনের মনে পড়ল এ গান তো ঈদের সময় বাজারে বের হবার কথা!

সঙ্গে সঙ্গে চলে গেলেন সেনোলা রেকর্ড কোম্পানির বিভূতিদার দোকানে। আব্বাসউদ্দীনকে দেখেই তাকে জড়িয়ে ধরলেন বিভূতিবাবু। সন্দেশ, রসগোল্লা, চা আনিয়ে খেতে দিলেন। আব্বাসউদ্দীনের গান দুটো আর আর্ট পেপারে ছাপানো তার বিরাট ছবির একটা বান্ডিল সামনে রেখে বললেন, ‘বন্ধু-বান্ধবদের কাছে বিলি করে দিও। আমি প্রায় সত্তর-আশি হাজার ছাপিয়েছি, ঈদের দিন এসব বিতরণ করেছি। আর এই দেখ দু’হাজার রেকর্ড এনেছি তোমার।’

আনন্দে-খুশিতে মন ভরে উঠল আব্বাসউদ্দীনের। গ্রামোফোন কোম্পানির রিহার্সেল রুমে ঢুকে পড়লেন। গলা শুনেই একদম লাফিয়ে উঠে তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন নজরুল। ‘আব্বাস, তোমার গান কী যে…’ আর বলতে না দিয়ে নজরুলকে কদমবুসি করলেন। ভগবতীবাবুকে বললেন, ‘তাহলে এক্সপেরিমেন্টের ধোপে টিকে গেছি, কেমন? তিনি বললেন, ‘এবার তাহলে আরও ক’খানা এই ধরনের গান…’ সবকিছুর জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিলেন আব্বাসউদ্দীন।

- Advertisement -
- Advertisement -

More articles

- Advertisement -

Latest article