জীবনের চলার পথে তিনজন নারীর ব্যক্তিগত উপলব্ধি ও দর্শন নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘ইন দিয়ার ওউন টাইম’। এর নির্মাণে যুক্ত ছিলেন ঢাকা-কলকাতার শিল্পী-কলাকুশলীরা। সিনেমাটির সাউন্ড ডিজাইন করেছেন বাংলাদেশের প্রীতম চক্রবর্তী, যার ডাকনাম দীপ। আর পরিচালনা করেছেন কলকাতার সূর্য দীপ্ত।
পশ্চিমবঙ্গের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন প্রীতম। থাকতেন তখন যাদবপুরে। সেসময়েই ক’জন বন্ধুবান্ধব মিলে তৈরি করেছিলেন এই সিনেমা, যা ইতিমধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে। এর মধ্যে স্পেনের মীরাদাস ডক মার্কেট ক্যাটালগ, ইতালির বেনেভেন্তো সিনেমা অ্যান্ড টেলিভিশন ফেস্টিভ্যাল, কলিজিয়াম ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, মেক্সিকোর সিউদাদ দে ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, অস্ট্রেলিয়ার ইন্ডিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব মেলবোর্ন (আইএফএফএম), ফ্রান্সের গ্যাঙ্গ সার সেইন ফেস্টিভ্যাল, সার্ভিয়ার কাম অন ডক, আমেরিকার লিগ্যাসি থিয়েটার ইনডিপেনডেন্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালসহ ১২টি উৎসবে অফিসিয়াল মনোনয়ন পেয়েছে। ‘কাম অন ডক’ ও ‘লিগ্যাসি থিয়েটার’ উৎসবে পেয়েছে সেরা ফিচার ফিল্মের পুরস্কার।
সিনেমাটি নির্মাণে বড় ভূমিকা রয়েছে সংগীতের। এর নির্মাণ প্রক্রিয়াও ছিল উল্টো। গল্পকে প্রথমে ভিজ্যুয়াল নয়, রূপায়ণ করা হয়েছিল অডিও ভার্সনে। ইনডিপেনডেন্ট ডিজিটালে কথা বলার সময় এই প্রসঙ্গ টেনে প্রীতম বলেন, ‘‘ফিল্মের ক্ষেত্রে আমরা যেটা দেখি যে, আগে ভিজ্যুয়াল হয়, তারপর সেই অনুযায়ী সাউন্ড, মিউজিক। কিন্তু এই ফিল্মটা উল্টো প্রক্রিয়ায় হয়েছে। প্রথমে অডিও হয়েছে, তারপরে সাউন্ড এবং সেই অনুযায়ী ভিজ্যুয়াল, মিউজিক। এটার মিউজিক কম্পোজ করার সময় রবীন্দ্রভারতীতে পড়ছিলাম, তখন আমাদের একটা রকব্যান্ড ছিল, নাম ‘স্টোন পেপার সিজর’। এই সুবাদে ক্লাসিক্যাল ও রক—দুই ধরনের মিউজিকই এই ফিল্মে রয়েছে।’’
নির্মাতা সূর্য দীপ্তর মতে, ইন দিয়ার ওউন টাইম সিনেমাটির গল্পকে দুটি পর্যায়ে বিশ্লেষণ করা যায়। প্রথম পর্যায়ে বিভিন্ন পটভূমি ও বয়সের এই নারীরা তাদের রুটিন, পরিবার, পেশা, বন্ধু ও দৈনন্দিন জীবন নিয়ে আলোচনা করে। দ্বিতীয় পর্যায়ে জীবন কীভাবে চলে—তাতে জোর দেওয়ার জন্য তিনজন বর্ণনাকারী আলোচনা করে যে, তারা কোথায় ছিল, কীভাবে তারা জীবনের কল্পনা করেছিল, এখন তারা কতদূর এসেছে এবং সময়ের সাথে সাথে নিজেদের ভেতরকার সম্পর্ক কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে।
প্রীতমের ভাষ্য, ‘ফিল্মটা মূলত মানুষের মনোজগতের প্রতিচ্ছবি। আমরা কীভাবে ভাবি, কীভাবে উপলব্ধি করি এবং সময়ের সাথে সাথে আমরা কতটুকু বদলে যাই—এই বিষয়গুলোই আসলে ফিল্মটার অন্তর্নিহিত প্রকাশ।’
এই ফিচার সিনেমার দৈর্ঘ্য ১ ঘণ্টা ৫৩ মিনিট ৩৯ সেকেন্ড। এতে অভিনয় করেছেন শ্রীজা, তুহনু বৃষ্টিধারা ও ঝুমুর চক্রবর্তী। গল্পটি লিখেছেন নির্মাতা সূর্য নিজেই। প্রযোজনায় তাঁর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সন্দীপ ঘটক।
সিনেমাটি এভাবে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফেস্টিভ্যালে মনোনয়ন ও পুরস্কার জেতায় অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন সংগীত পরিচালক। কথায় কথায় প্রীতম চক্রবর্তী বললেন, ‘আমরা যখন এই ফিল্ম করি, তখন খুব বেশি প্রত্যাশা ছিল না। কিন্তু বছর দুই হয়, ফিল্মটা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে অফিসিয়ালি নির্বাচিত হচ্ছে। যার মধ্যে মর্যাদাকর ইউরোপিয়ান ডক মার্কেট ক্যাটালগ, ইতালি-ফ্রান্সের বিভিন্ন ফেস্টিভ্যাল রয়েছে। ক’দিন আগে আমেরিকার লিগ্যাসি ফেস্টিভ্যালেও প্রদর্শিত হয়েছে। যে কারণে এই ফিল্ম থেকে বেশ অনুপ্রেরণা পাচ্ছি। যদিও এটা আমার একেবারে শুরুর দিকের একটা কাজ।’
ইতিমধ্যে দেশে ফিরে চার বছর ধরে পেশাদার সাউন্ড ডিজাইনার হিসেবে বেশকিছু চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন প্রীতম। তবে তাঁর মতে, ইন দিয়ার ওইন টাইম চলচ্চিত্রটিই সেরা একটি কাজ। কেননা এখন পর্যন্ত অন্য চলচ্চিত্রে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি মেলেনি।
অন্যদিকে, সিনেমাটি এরইমধ্যে ভারতের মুম্বাইয়ে প্রদর্শিত হয়েছে। কথা চলছে ঢাকা-কলকাতায় প্রদর্শনীর ব্যাপারেও।